দেশ ও জাতির চাহিদার নিরিখে আধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক সুশৃঙ্খল শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ কঠোর নিয়মানুবর্তিতা ও উচ্চ মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য কলেজটি অল্প দিনেই সমগ্র বাংলাদেশে খ্যাতি লাভ করেছে। শিক্ষার সাথে আনন্দের সংযোগে সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণীদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি কলেজটির অন্যতম বৈশিষ্ট। নামকরণ বৃহত্তর ময়মনসিংহ সর্বত্যাগী, নিলোর্ভ কৃতী সন্তান ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম (১৯২৫-১৯৭৫) এর পুণ্য স্মৃতিকে ধরে রাখার উদ্দেশ্যে ময়মনসিংহের সর্বশ্রেণী ও পেশার মানুষের আকাঙ্ক্ষা অনুসারে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে ১৯৯৯ সনের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ।
কলেজের নামকরন
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন একজন খ্যাতিমান অধ্যাপক, লব্ধ প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী, পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। ১৯৫২, ৬২,৬৬, ৬৮, ৬৯ এর জাতীয় আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে এবং ১৯৭১ সনের মহান মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে এই অকুতোভয় বীর সেনানী জাতিকে দিয়েছিলেন সফল নেতৃত্ব। অসাধারণ দেশ প্রেম, নিষ্ঠা,সততা এবং তাঁর বৈচিত্র্যময় কর্মজীবন তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল জাতীয় নেতৃত্বে, বাঙালী জাতিকে বসিয়েছিল শ্রদ্ধার আসনে। নভেম্বর বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ময়মনসিংহ শহরেই কাটিয়েছেন তাঁর শৈশব, কৈশোরকাল।ময়মনসিংহকে ভালবেসে, ময়মনসিংহ থেকেই তিনি শুরু করেছিলেন তাঁর সকল কর্মকাণ্ড। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা তথা বাঙালীর জাতির রাজনৈতিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিতে গিয়ে ১৯৭৫ সালে ৩ নভেম্বর প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের হাতে কারাবন্দি অবস্থায় নিহত হন নিমর্মভাবে। প্রতিক্রিয়াশীল চক্র উপ রাষ্ট্রপতির লোভ দেখিয়েও তাঁকে আদর্শচ্যুত করতে পারেনি। তিনি মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছিলেন হাসি মুখে। ১৯৮৯ সালে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের কয়েকজন প্রিয় ছাত্র, সহকর্মী এবং গুণগ্রাহী তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনকে ধরে রাখার প্রয়াসে ময়মনসিংহ শহরে প্রতিষ্ঠা করেন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পরিষদ। ১৯৯৯ সালের ১ জুলাই শহরে প্রাণ কেন্দ্রে শ্যামাচরণ রায় রোডে কাশিকিশোর কারিগরি বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত একখণ্ড বাড়ীতে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ।
কলেজে প্রতিষ্ঠার পটভূমি
১৯৮৯ সালে “শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পরিষদ” প্রতিষ্ঠার পরপরই এই মহান ব্যক্তিত্বের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার উদ্দেশে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উঠে আসে সংগঠনের সভা গুলোতে। তবে আনুষ্ঠানিক উদ্দ্যোগ গ্রহণে অনেক সময় পেরিয়ে যায়।১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহ শহরে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ছাত্রদের অধ্যায়নের একমাত্র সরকারী প্রতিষ্ঠান আনন্দ মোহন কলেজ থেকে সরকারী নির্দেশে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী উঠিয়ে দেয়া হলে অভিভাবকগণ হয়ে পড়েন উদ্বিগ্ন। শহরের অন্যান্য বেসরকারী কলেজ গুণগত মান সম্পন্ন না থাকায় কিংবা কোন প্রতিষ্ঠানকে সরকার সরকারীকরণ না করায় বিষয়টি ময়মনসিংহবাসীর দাবীতে পরিণত হয়। ১৯৯৮ সালে ২৮ আগস্ট শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পরিষদের সভায় একটি মান সম্পন্ন এবং শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের নামে কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আলোচ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত হয়। বেসরকারী ল্যাবরেটরী উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সে সভায় প্রধান আইনজীবী এবং স্মৃতি পরিষদের আহবায়ক এম. জুবেদ আলী সাহেবের সভাপতিত্বে ময়মনসিংহ শহরে একই নামে একটি সরকারী ও একটি বেসরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থাকায় বেসরকারী ল্যাবরেটরী উচ্চ বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তন করে “সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্কুল এন্ড কলেজ” করার প্রস্তাব সর্ব সম্মতিক্রমে গৃহীত হয় এবং এক পত্রে স্কুল ব্যাবস্থাপনা কমিটির কাছে বিষয়টি সহানুভূতির সাথে বিবেচনা এবং ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পরিষদের পক্ষে অনুরোধ জানানো হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে স্কুলটির সিংহভাগ অভিভাবক স্বতস্ফূর্ত সমর্থন জ্ঞাপন করেন। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.এ কাসেম তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ রফিকুল ইসলামের সাথে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। ১৯৯৯ সালের ৬ মে জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির কার্যালয়ে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পরিষদের এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে সভায় উপস্থিত হন আনন্দ মোহন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর শামসুল ইসলাম, পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর আবুল কালাম,নেত্রকোণা সরকারী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর মজিবর রহমান, আনন্দ মোহন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মুজিবুর রহমান। সভায় প্রখ্যাত শিক্ষাবিদগণ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের নামে কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্দ্যোগকে এবং কলেজটি প্রতিষ্ঠাকল্পে স্বেচ্ছাশ্রম প্রদানের অঙ্গীকার করলে কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্দ্যোগ গতি পায়। সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে ২০ সদস্য বিশিষ্ট কলেজ সাংগঠনিক কমিটি তথা প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়। কলেজ প্রতিষ্ঠার পর প্রফেসর শামসুল ইসলাম তাঁর সর্বাত্মক চেষ্টায় কলেজকে এগিয়ে নেন। তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতায় এবং শহরে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কলেজটিকে অচিরেই একটি উন্নতমানের কলেজে পরিণত হবার যোগ্যতা তৈরি করে দেয়। ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। কলেজটি শিক্ষকদের একাগ্রতা, বাড়ী বাড়ী পরিদর্শন ইত্যাদি নিয়ে ক্রমঅগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখে। ২০০৪ সালে মে মাসে প্রফেসর শামসুল ইসলাম বয়সজনিত কারণে অবসর গ্রহণ করেন।